রহস্যময় নাজকা রেখা

Image Source-www.express.co.uk


পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ২০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে এক রহস্যময় স্থাপনা।
নাজকা সভ্যতার সময় তৈরি প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে সেই দীর্ঘ রেখা যা নাজকা লাইন নামে পরিচিত।
 দক্ষিণ পেরুর মরুভূমিতে অবস্থিত এ স্থাপনা নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন হালের বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৪০০ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে নাজকা সভ্যতার মানুষ এই বিশাল রেখা তৈরি করেছিল।


Image Source-www.tourradar.com

মাটি থেকে ভালোভাবে বোঝা না গেলেও আকাশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় এই বিশেষ রেখাগুলো!
যেন আকাশ পথে আসা যানের অবতরণের জন্য তা নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু ঠিক কি উদ্দেশে প্রাচীন সভ্যতার মানুষ শ্রম দিয়ে এমন রেখা তৈরি করেছে তা এখনো বের করতে পারেনি আধুনিক বিজ্ঞান। প্রাচীন ওই রেখাগুলোও বেশ রহস্যময়।
রেখাগুলোর শতাধিক পুরোপুরি সরল রৈখিক কিংবা জ্যামিতিক আকৃতির।
এছাড়া ৭০টির মতো রেখাচিত্র রয়েছে, যেগুলোয় ফুল, পাখি, বাঁদর, মানুষসহ বেশকিছু প্রাণীর বিশাল প্রতিকৃতি।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নকশাটি প্রায় ২০০ মিটার লম্বা।
১৯২৭ সালে পেরুর এক প্রতœতাত্ত্বিক কাছের ফুটহিল নামের পর্বতে ভ্রমণের সময় রহস্যময় এই রেখাচিত্র দেখতে পান।
মাথা ঘুরিয়ে দেয়া আশ্চর্য রেখা দেখে তিনি পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালে এক বিজ্ঞান সম্মেলনে বিষয়টি প্রকাশ করেন।
এরপর লঙ আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ পল কোসক এবং জার্মান গণিতবিদ ও প্রতœতাত্ত্বিক মারিয়া রিচি এই রেখাগুলোর রহস্য জানতে প্রচুর গবেষণা করেন।
কিন্তু যুক্তিনির্ভর কোনো উত্তর পেতে তারা ব্যর্থ হন। এরপর অনেক গবেষকই নাজকা লাইন নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু অন্ধকার কাটেনি!
গবেষক কোসক ও রিচি সেবার জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক গবেষণায় তাদের মতে হয়েছে নাজকারা এই রেখাগুলো মূলত তাদের উপাস্য দেবতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তৈরি করেছিল।
১৯৯০ সালে অপর গবেষক জেরাল্ড হকিং ও এন্থনি এভেনিও জানান, এসব রেখার সঙ্গে মহাজাগতিক কোনো যোগ থাকতে পারে। অবশ্য প্রমাণের অভাবে সেসব যুক্তি উড়িয়ে দেয় আধুনিক বিজ্ঞান।
এরপর সুইস লেখক এবং এলিয়েন গবেষক এরিখ ভন ড্যানিক্যান ভিন্নধর্মী ব্যাখ্যা সামনে নিয়ে আসেন।

Image Source-www.pinterest.se

বলেন, নাজকা রেখা ও অন্যান্য জটিল নকশাগুলো অনেক উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
তার দাবি, সেই যুগের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি রেখাগুলো মূলত ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের অবতরণের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়।
এরিখের মতে বিশাল বিশাল এই রেখাগুলো আসলে রানওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
যার সাহায্যে ভিনগ্রহের যান পৃথিবীর ওই স্থানে অবতরণ করতো।
এরিখ ১৯৬৮ সালে তার প্রকাশিত বই ‘ঈযধৎরড়ঃং ড়ভ ঃযব এড়ফং’-এ দাবি করেন, এই রহস্যময় নাজকা লাইন আর আধুনিককালের রানওয়েগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে অনেক বিজ্ঞানীও জানান, নিশ্চয়ই প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা আকাশে ওড়ার কিংবা এলিয়েন অবতরণের বিষয়টি জানতো।
সম্ভবত সেই রকম প্রযুক্তিও তাদের কাছে ছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে, ইতিহাসের এ অংশটি হারিয়ে গেছে।
তাদের দাবি, এই নাজকা রেখাই টিকে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রানওয়ে!
এলিয়েন বিশ্বাসীরা দাবি করে থাকেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানে উন্নত সেই জাতির জ্ঞানের মাধ্যমই ছিল ভিনগ্রহের প্রাণীরা। তারা পৃথিবীতে এসে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে অনেক জ্ঞান তারা মানুষকে দিয়েছে।
Image Source-www.disclose.tv

উন্নত ভিনগ্রহের মানুষকে তাই সেই জাতি দেবতার স্থানে বসিয়েছিল।
অবশ্য রহস্যময় নাজকা রেখা নিয়ে গবেষণা চললেও ভিনগ্রহের উন্নত প্রাণীর যাতায়াতের রানওয়ের দাবি মানতে নারাজ মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
তবে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার বিশাল এই স্থাপনা এখনও বিরাট প্রশ্ন হিসেবে কটাক্ষ করছে এই যুগের বিজ্ঞানকে।

পৃথিবীর এই বিস্ময়কর নাজকা রেখা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে কামেন্ট বক্স এ আমাদের জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ।

Comments